
চুলের গোড়ায় কিছু রিসেপ্টর থাকে, যেগুলো হরমোনের উপস্থিতিতে চুলের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তিভেদে জিন সাপেক্ষে এই রিসেপ্টরের কাজ নানা রকম। ফলে একই মাত্রার হরমোন থাকা সত্ত্বেও চুলের তারতম্য হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে তাই বয়ঃসন্ধিকালে সামনের চুল কমতে দেখা যায়। অনেকের আবার টাক পড়াও শুরু হয়।
অল্প বয়সে চুল পড়ার জন্য থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য, রক্তাল্পতা, ওভারি বা ডিম্বাশয়ের অসুখ কিংবা যেকোনো এন্ডোক্রাইন ডিসঅর্ডার দায়ী হতে পারে। ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত কম খাওয়া চুল পড়ার কারণ হতে পারে। সুষম খাদ্য কিংবা যথেষ্ট প্রোটিন না খাওয়ার কারণেও চুল পড়তে পারে। প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি হলে চুল পড়ে।
বর্তমানে চুল পড়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ প্রচুর। অল্প বয়স্ক তরুণ-তরুণী থেকে বেশি বয়স্কদেরও। নানা কারণে আজকাল সবারই বেশি বেশি চুল উঠে যাচ্ছে। নিশ্চিন্ত জীবনযাপন এখন কারো নেই। সব সময় টেনশন, আশঙ্কা, অশান্তি এসব লেগেই আছে। অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা বা চাকরিজনিত টেনশনে ভোগে। ঢেঁকিছাঁটা চাল, টাটকা শাকসবজি, ফল ইত্যাদি আমরা পাই না এবং খাই না। নানারকম রাসায়নিক উপাদান, প্রিজারভেটিভ, কালারিং এজেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার আমরা হরহামেশাই খাচ্ছি। ফলে সুষম খাদ্য গ্রহণ হচ্ছে না। আবার ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম হয় না। এতে করে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। চুলের গোড়াও নানা প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়।
আবার রূপচর্চা কেশচর্চার জন্য আমরা অনেকেই চুলে হিট ও কেমিক্যাল প্রয়োগ করে থাকি। চুল ও রূপ সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতনতা থেকেও চুল উঠতে পারে। চুলে মনমতো স্টাইল বজায় রাখতে গিয়ে চুলের ক্ষতি হয়ে যায়। বর্তমানে চুল পড়া রোধে নানা আধুনিক চিকিৎসা এসেছে। অ্যান্ড্রোজেনিক এলোপিসিয়াতে মুখে খাওয়া ওষুধ দেয়া হয়, যা হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে। এসব ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দীর্ঘ দিন খেতে হয়। আবার চুল গজানোয় কিছু ব্যবহার করা হয়। এটাও নিয়ম মেনে লাগাতে হয়। এলোপিসিয়া এরিয়েটা হলে আবার স্টেরয়েড ড্রপ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। তবে সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং চুল খুশকিমুক্ত পরিষ্কার রাখার পরেও যদি চুল পড়ে, তবে এখনই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কারণ মাথায় চুল পাতলা হতে থাকলে চিকিৎসা করে টাক পড়া রোধ করা সম্ভব। কিন্তু পুরোপুরি টাক পড়ে গেলে তার চিকিৎসায় ওষুধ ছাড়াও রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিকারঃ
নিম্ন লিখিত খাবারগুলো নিয়মিত খেলে চুল পড়া কমতে পারে-
- গাঢ় সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে যাতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই আছে যা natural conditionar হিসেবে কাজ করবে ।
- তিসি চুলের জন্য ভীষণ উপকারী।
- শিমের বিচি, মটর শুটি, বরবটি ইত্যাদ যা প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়াও আয়রণ, জিঙ্ক ও বায়োটিন আছে যা চুল ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
- লাল চাল,লাল আটা খেতে হবে যাতে জিঙ্ক, আয়রণ ও ভিটামিন-বি পাওয়া যায়।
- কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোটও natural conditionar এর কাজ করে।
- খাবার তালিকায় প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন যেমন-মুরগী, ডিম রাখতে হবে।
- কম চর্বি যুক্ত দুধে ক্যালসিয়াম আছে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশকীয় উপাদান।
- সূর্যমূখীর বীচি চুলকে মজবুত ও ঝলমলে করতে দারুন ভাবে কাজ করে।
- গাজর ভিটামিন-এ এর ভাল উৎস যা প্রতিদিন সালাদ হিসেবে খাওয়া যা